Sunday, July 7, 2013

ভাঙ্গাচশমা

একবার আমি ভারতের মাদ্রাজে (বর্তমানে চিন্নাই) গিয়ে পৌঁছি ভোর ৫টায়। সকাল ৭টায় আমার কানেকটিং ট্রেন, ব্যাঙ্গালোরে যাবো। কত নম্বর প্লাট ফর্মে আমার ট্রেন আসবে তা জানার জন্য আমি এ্যনকোয়েরী লেখা রুমে গেলাম। গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাকে প্রথমে ইংরেজিতে জিজ্ঞাস করলাম, জবাব দিয়েছিল, ইল্লা মানে জানেনা। বুঝলাম সে ইংরেজী বুঝেনা। হিন্দিতে জিজ্ঞাস করলাম, সেই একই জবাব। সেখান থেকে সরে এসে একে ওকে ধরে ধরে জিজ্ঞাস করছি কিন্তু উত্তর পাচ্ছিনা। তারা সবাই তাদের মাতৃভাষা তামিল ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কথা বলবেনা বুঝলাম। মেজাজটা গরম করে বলে বসলাম, ব্লাডি ইন্ডিয়ান। আমার পাশে একজন সুইপার ষ্টেশন পরিষ্কার করছিল। হঠাৎ খেয়াল করলাম, সে তার কাজ বাদ দিয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে সেখান থেকে কেটে পরি।

আমরা কিছু পারি আর না পারি, একটা ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শী। কিভাবে, কতো সুন্দর করে নিজের ব্যর্থতা অন্যের ঘাড়ে চাপাতে হয় তা আমাদের থেকে বেশী আর কেউ পারে বলে আমার মনে হয়না। এ কর্মটা আমরা বেশ আন্তরিকতার সাথেই করে থাকি। এই বালিশ চালাচালি খেলাটা আমরা রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।

দেশের যে কোন সমস্যা, নির্দিধায় তা আমরা বিরোধীদলের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি। বিরোধীদলও তা সরকাররের উপর চাপাচ্ছে। এ নিয়ে আবার জাতীয় সংসদেও রীতিমতো উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সেই সংসদ থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের দোকান পর্যন্ত সবখানেই এই ব্যর্থতার বালিশ একজন আর একজনের কাছে দিয়ে দিতে ব্যস্ত।

ছোট বেলায় স্কুলের ‘আমার বাংলা’ বইয়ে একটা গল্প পড়েছিলাম, দশের লাঠি একের বোঝা। কি চমৎকার ছিল সেই গল্প। আজকালকার বইগুলোতে এই গল্প আছে কিনা জানিনা। তবে আমাদের পূর্বপুরুষরা যে এই গল্পটা পড়েননি বা শুনেননি তা আমি শতভাগ নিশ্চিত।

প্রাশ্চাত্যের দেশগুলোতে দেখি নির্বাচনের ফলাফলের পরপরই বিজয়ী দলকে শুভেচ্ছা জানায় প্রতিপক্ষ। শুধু শুভেচ্ছা নয় যৌথভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবারও অঙ্গীকার করেন তার। আর আমাদের দেশে! সেই ১৯৯১ সাল থেকে দেখে আসছি, নির্বাচনে হেরে গেলেই সূক্ষ কারচুপির অভিযোগ। বিরোধীদলগুলোর সংসদ বর্জন।

অন্যান্য দেশগুলোতে যেকোন জাতীয় ইস্যুতে দেখা যায় দল মত নির্বিশেষে সবাই একত্রে কাজ করে। সবাই জাতীয় স্বার্থে একত্রিত হয়ে যায়। আজ আমেরিকার সিআইএর সাবেক গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক এডওয়ার্ড স্নোডেন এর ইস্যুতে সরকারী দল আর বিরোধীদল যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আর আমরা? একে অন্যকে খালি দোষারোপই করে যাই। কখনও একত্রিত হতে পারিনা। কখনও শুনলাম না আমাদের কোন নেতা বলছেন, আসুন আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করি।

জিএসপি সুবিধা যে কারনেই স্থগিত করা হোকনা কেন, আমরা কি পারিনা সম্মিলিতভাবে তা আবার পুনুরুদ্ধার করতে? আমরা কি পারিনা জাতীয় সমস্যাগুলোতে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে কাঁধ কাঁধ মিলিয়ে সমাধান করতে?

ভুলে গেলে চলবে না, দশের লাঠি একের বোঝা। আজ যা সরকারের একার পক্ষে বোঝা, তা সরকার আর বিরোধীদলের সমন্বয়ে একটা তাসের ঘর মাত্র। আসুন ব্যক্তিগত হানাহানি, ক্ষমতার কাড়াকাড়ি বাদ দিয়ে দেশের জন্য কিছু একটা করি। দেশকে দিতে চাইলে তা যেকোন স্থান থেকেই দেওয়া যায়, ক্ষমতায় আরোহন অপরিহার্য নয়। আপনি দেশকে দিয়ে যান, জনগন আপনাকেই সাপোর্ট দিবে।।

‎#ভাঙ্গাচশমা


০৫/০৭/২০১৩

No comments:

Post a Comment