আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এই দিনটিতে প্রেমিক প্রেমিকা একজন আর একজনকে ভালবাসা প্রদর্শন করে। কি মজার ব্যাপার। ভালবাসাও দোকানের অন্যন্য মালের মতো প্রদর্শন করতে হয়।
অনেক মনিষী, লেখক, সাহিত্যিক ভালবাসার বিভিন্ন সংগা দিয়েছেন। দিয়েছেন স্ব স্ব উক্তি। কিন্তু কেউই আজ পর্যন্ত সর্বজন স্বিকৃত কোন সংগা দিতে পারেনি। ব্যাপারটা বিদঘুটে বা জটিল বলে হয়ত তারা দিতে পারেনি বা দেয়নি।
তবে আমার কাছে ভালবাসা একটা সূক্ষ অনুভূতির ব্যাপার্। যে ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে আসলে পরে কিছু সুখকর অনুভূতি হয় আমরা ধরে নেই তাকে বা সেই বস্তুকে আমরা ভালবাসি। কিন্তু যখন সেই একই ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে এসে আমাদের কোন খারাপ বা বাজে অনুভূতি হয় তখন নিজের উপর ঘেন্না হয় ছি! আমি এটাকে বা কাকে ভালবাসি (ক্ষেএ বিশেষে)। একই ব্যক্তি বা বস্তুর উপর পরষ্পর বিরোধী অনুভূতি। জটিল ব্যপার। মাথা নষ্টকর। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে দেখা যাবে, যখনই কোন কাজ আমাদের পছন্দের বাইরে চলে যায় তখনই আমাদের ভালবাসা কপুরের মতো উড়ে যায়। তাইতো কোন এক কবি বলেছেন “অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।”
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখতে পাই, রোমিয়-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখা এবং আরও অন্যান্য। তাদের প্রেম অমর হয়ে আছে এবং থাকবেও। তারা প্রেমের জন্য কিনা করেছে? কেউ রাজত্ব, যশ, খ্যাতি সবই জলাঞ্জলি দিয়েছে। আর আমরা যান্ত্রিক যুগে কি নিয়ে ভালবাসার দোহাই দেই? পান থেকে চুন খসলেই জামা-কাপড়ের মত প্রেমিক বা প্রেমিকা পরিবর্তন। অথবা অযথা তর্ক।
তবে আজকাল প্রেমটা খুব সস্তা হয়ে গেছে। মোবাইলের মাধ্যমে এস,এম,এস। ইন্টারেটের মাধ্যমে ই-মেইল, ফেসবুক, চ্যাটিং কত সহজ প্রেম করাটা। হাত বাড়ালেই বন্ধু। তাই এখন আর প্রেম কাছে টানেনা, উত্তেজিত করে। প্রেম সুক্ষ থেকে সুক্ষতর অনুভূতিকে অনুভব করেনা, বাতাসে ফানুস উড়ায়। সায়ান্ন বেলায় রংয়ে রংগিন আকাশ আর প্রেমিক প্রেমিকাকে মুগ্ধ করেনা। মুগ্ধ করেনা গাংচিলের নীল আকাশে দিগন্তে উড়ে চলা, ভ্রমরের গুঞ্জন, বৃষ্টির রিমিঝিম শব্দ, হাসনাহেনার মাদকতা, চন্দ্রিমা রাতে কাশ বনের স্নিগ্ধতা, আমাবশ্যার আকাশ জুড়ে তারার মেলা, ঐ দূর দিগন্তে আকাশ আর মাটির মিশে যাওয়া। মুগ্ধ করেনা প্রিয়ার চুল, চোখ, মুগ্ধ করে ঠোঁট।
আজকাল প্রেম মানে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখা, ফাস্ট ফুডে বার্গার বা চিকেন ফ্রাই খাওয়া, মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা প্যাচাল পাড়া, বিশেষ দিনগুলোতে দামি দামি গিফট করা। তাতে নেই কোন আত্মার বন্ধন, নেই কোন আত্ম অনুভূতির প্রতিফলন। যেন টাইম পাসের একটা গেইম। আছে শুধু কিছু নষ্টামী আর ভন্ডামী। সবই যেন তপ্ত মরুভূমিতে মরিচিকা।
কোন এক মরমী গায়ক গেয়েছেন যে জন প্রেম জানে না তার সাথে নাই লেনা-দেনা, আসল সোনা ছাড়িয়া যে নেয় নকল সোনা সে জন সোনা চিনেনা। আসলেই প্রেম করতে হলে করতে হবে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে, নিজের স্বত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে। ভালবাসতে হবে নিজেকে উজাড় করে। রাম যেমন সীতার অগ্নি পরীক্ষা নিয়ে সীতাকে হারিয়েছে তেমনি ভালবাসার পরীক্ষা নিয়ে ভালবাসা হারালে চলবেনা। ভালবাসতে হবে নিজের সমস্ত বিশ্বাস দিয়ে, অনুভূতি দিয়ে, অন্তরের অন্তস্থল দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে নয়। ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য নয়, অনুভবের জন্য। ভালবাসার কোন নিদর্শন এর প্রয়োজন নেই। মা সন্তানকে ভালবাসে এর নিদর্শন বা প্রদর্শন প্রয়োজন হয়না আপনা আপনি প্রতিফলিত হয়। তেমনি সত্যিকারের ভালবাসা তোমার আমার কাজে প্রতিফলিত হবে তার জন্য কোন উৎসব বা উপলক্ষ্যের প্রয়োজন নেই। সবশেষে বলতে পারি নি:শেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নেই ওরে ক্ষয় নেই তার।
১৪/০২/২০১১
No comments:
Post a Comment