Monday, February 14, 2011

digitalization problem

আমি বিগত ৫ বছর যাবত দেশের প্রথম সারির একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর আইটিতে কাজ করছি। আমি সেখানে মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপ করার জন্য রিক্রুট হই। সেখানে কাজ করার সময় আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। আমি খুব গভীর ভাবে অনুধাবন করি টেকনিক্যাল আর নন-টেকনিক্যাল প্রফেশনালদের মাঝের দন্দ। দেখি কিভাবে আমরা ডিজিটালাইজেশন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। আরও দেখি কিভাবে আমাদেরকে দমিয়ে রাখা হয়। এসমস্যার সমাধান নিয়ে অনেকবার চিন্তা করেও কোন ফলাফল পাইনি। আজ তার কিছু শেয়ার করার জন্য লেখা।

ভীতি:
সব সময়ই আমরা দেখে আসছি আমাদের মেশিন ভীতি। আমরা খুব সহজেই যন্ত্রকে আপন করে নিতে শিখিনি। আজও আমরা একটা নতুন মোবাইল সেট কিনলে তা ‍operate করতে প্রথম প্রথম খুব ভয় পাই। খুব দেখে শুনে চালাই। এর পিছনে খুব সম্ভতত আমাদের অর্থনৈতিক ব্যাপারটা জড়িত। কেননা আমরা আমাদের জমানো টাকা দিয়েই পছন্দের সেটটা কিনে থাকি। এটা নষ্ট হলে পরে আর একটার জন্য কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এই ভীতটা আমি আমার computer operator দের মাঝেও দেখেছি। তারা operate করতে খুব ভয় পেত যদি নষ্ট হয়ে যায়। তার সহকারীরাও বারবার তাকে বলত না শিখে computer এ হাত দিওনা। তাহলে তুমি না বুঝে এটা ওটা টিপে সব নষ্ট করে ফেলবে। computer নষ্ট হলে এর দাম তোমাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে।
এখন আমার প্রশ্ন হলো যদি তারা computer না ধরে তাহলে শিখবে কিভাবে? তারাও আমার কাছে অভিযোগ করতো বসেরা নাকি তাদেরকে computer ধরতে নিষেধ করে। আমি সবার সাথে বারবার আলাপ আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত operate করতে দিতে রাজি করিয়েছিলাম। যার ফল আজ আমার কোম্পানী পাচ্ছে। আমার ব্রাঞ্চ অফিসগুলো এখন আরও computer চাচ্ছে।

এরপর আসে চাকুরি হারানোর ভয়। তাদের ধারনা ছিল computer বুঝি তাদের জায়গা দখল করবে। computerized হলে পরে কোম্পানী লোক ছাটাই করবে। বেকারত্বের ভয়ে অনেকেই আমাকে ঠিকমত সহযোগিতা করেনি। বারবার management কে বুঝাতে চেয়েছিল computerized করা সম্ভব নয়। আমার ভাগ্য ভালো যে আমার Managing Director একজন দক্ষ ব্যক্তি। তাদের এই ভুল ভাঙ্গিয়ে অগ্রসর হতে আমাকে কতটা যাতনা পোহাতে হয়েছিল তা ব্যক্ত করার ভাষা আমার নেই।

অপর্যাপ্ত তথ্য:
আমি আগেই বলেছি আমি software development এর জন্য রিক্রুট হই। আপনারা জানেন সফটওয়্যার তৈরী করার জন্য সমস্ত তথ্য (working procedures, input, output etc.) সরবরাহ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট department এর সাথে বারবার আলোচনার পরও তারা কখনও আমাকে সঠিক বা সম্পূর্ণ তথ্য দিতন‍া। কাজ শেষ করে এনে যখন তাদেরকে test করার জন্য দিতাম তারপর বলত তাদের আরও কিছু বেশী তথ্য দরকার। কখনো বছরখানেক পর বলতো আরও দুই একটা তথ্য input দেওয়া দরকার। আপনারা যারা development এর সাথে জড়িত তারা আশা করি অনুধাবন করতে পারছেন এর hassleটা কি বা কত?

অহমিকা:
এই ‍আমিত্ব আমাদেরকে যে কতটা পিছনে ফেলে রেখেছে তা আমরা ‍first world এর দিকে তাকালেই বুঝতে পাই। আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করার জন্য যখন কোন department in-charge এর কাছে যেতে হয়েছে, উনি আমাকে তথ্য সরবরাহ করার জন্য উনার দুই-একজন সহকারিকে assign করে দিতেন। দেখা গেছে তাদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে কোন প্রকার সহযোগিতা করছে না। বারবার অনুরোধ করার পরও কোন প্রকার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করছেনা। অথবা ‍আপর্যাপ্ত তথ্য দিচ্ছে। একটু অনুসন্ধান করার পর দেখা গেল department এর 2nd person তাকে নিষেধ করেছে। কারন, আমাকে তথ্যের জন্য আগে তার কছে অনুরোধ করতে হবে পরে তিনি নির্দেশ দেবার পর আমি তথ্য পাব।

দক্ষতা:
আমি কোম্পানীতে যোগ দেবার আগে সেখানে আর একজন অফিসার ছিল। যে পুরো ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে ছিল। আমি আশ্চর্য হলাম যখন জানলাম সে operating system install করতে পারেনা। আরও অবাক হই যখন তার সাথে কথা বলে বুঝলাম আসলে computer সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই। সে শুধু MS Office এ ভাল কাজ করতে পারে। আমি নিয়ে department এ আমরা দুইজন মাত্র।

অনাভিজ্ঞতা:
আমাকে প্রায় সময়ই আমার উর্ধতন কর্মকর্তা ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে অনুরোধ করতেন। যখনই সময়ের ব্যাপার আসতো তাদের বক্তব্য হতো computerএ তো বোতাম চাপলেই হয়ে যায় তাহলে আপনার এত সময় কেন লাগবে। আপনি না পারলে বলেন আমরা অন্য কোনভাবে চেষ্টা করি। এই কোন ভাবে চেষ্টাটা যে কি তা আজও আমার জানা হলোনা।

আরও কয়েকটা কাজ আমাদের উপর ন্যস্ত ছিল। সেগুলো হলো মেইল করা, স্ক্যান করা, বিভিন্ন document word-এ compose করা। আজও আমাদেরকে অনেক কাগজ স্ক্যান করে দিতে হয়। এর কারন এ নয় যে তারা পারেনা, তারা করবে না। কারন, computer related সব কাজ নাকি আমাদের দায়িত্ব।

আজও আমাদেরকে একটা অতি গুরুত্বপূর্ন মেইল পাঠানোর জন্য তলব করা হয়, যেখানে প্রায় সবারই internet connection আছে। তারা ‍facebook অথবা dse web site ব্যবহার করার জন্য কখনও তলব করেনি।

অসহযোগিতা:
যখনই software ‍এ কোন ছোটখাট কোন ত্রুটি দেখা দিত তখন প্রায়ই আমি লক্ষ্য করেছি department এর লোকজন দল নিয়ে একদম উপর মহলে হাজির হতো্ । বিষয় software দিয়ে কিছুই হয়না। যদি এরকম ভুল হয় তাহলে তারা কাজ করবে কিভাবে। এর থেকেতো তাদের আগের (manual) পদ্ধতিই ভালো ছিল। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত তাদের input অথবা selection ভুল। হয়তবা অনেক সময় দেখা যেত আমরা বিপোর্টং করেছি একভাবে কিন্তু government চাচ্ছে আর এক format এ, হয়তবা দু’একটা field add (report) করলেই হয়, তখনও শুনতে হত আমাদের এই সফটওয়্যার দিয়ে এসব করা যায়না, আমাদেরকে manual –এ কাজটা করে দিতে হবে।

কখনও দেখা গেছে আমি একটা module develop করে তাদেরকে দিয়েছি test করে দেবার জন্য, বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তারা তা থেকে বিরত থাকত। যখন তারা সেই module ব্যবহার করতে বাধ্য হত তখন আবার সেই নালিশ। এসব করা যায়না। আবার আলোচনা। শেষ পর্যন্ত তাদের স্বিকারউক্তি তারা তাদের ব্যস্ততার জন্য test করার সময় পায়নি।

আবার কখনও লক্ষ্য করেছি তাদেরকে আমি একটা module এর operation শিখিয়েছি এবং তাদের দিয়ে সম্পূর্ন process টা খাতায় বা কাগজে লিখিয়েছি কিন্তু তারা তাদের বয়স বা অন্য কোন কারনে তা মনে রাখতে পারছেনা সেখানে আমাকে গুনতে হয়েছে বঞ্চনা। আমরা নাকি তাদেরকে দেখাইনি বা শিখাইনি।

আমি Chittagong zone এ এই কয়েকদিনে ৩ জনকে appointment দেয়েছি। কিন্তু তারা একজন ও টিকলোনা। সমস্যা একটাই সেখানকার In-charge এর এক relative তার প্রতিটি কাজে বাগরা দেয়, প্রতিটি বিলে হস্তক্ষেপ করে। তার বক্তব হচ্ছে তাকে জিজ্ঞাস করে সব কাজ করতে হবে। তার অনুমতি না নিয়ে কোন কাজ করতে পারবেনা অথবা তাকে জিজ্ঞাস না করে কোন branch এ যেতে পারবেনা। এই ব্যাপার নিয়ে management এর সাথে আলাপ করেও কোন ফল পাইনি।


শিক্ষা ব্যবস্থা:
আমাকে আমার department এ কিছু লোক নিয়োগ করতে হয়েছে। তখন আমার আরও একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভাল result করা কিছ‍ু ছাত্রের cv পেয়ে interview এর জন্য call করেছিলাম। তাদের সাথে কথা বলে দেখলাম তারা সবাই সব জানে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তারা basic জানেনা। প্রায় সবাইকে প্রশ্ন করেছিলাম visual basic object oriented কিনা? একজনও এর সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। যারা java নিয়ে খুব মাতামাতি করেছিল তাদের প্রশ্ন করেছিলাম abstract class কি? Abstract class আর interface এর মধ্যে পার্থক্য কি? অথবা java তে multiple inheritance কিভাবে করতে হয়?


এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আল্লার রাহমেত আজ আমার কম্পানিতে প্রায় ২০০ টার মত computer। ঢাকার সবগুলো branch intranet এর মাধ্যমে connected। পুরো অফিসের প্রায় ৭০% কাজ computerized। যদি আমরা আরও একটু সহোযোগিতা পেতাম তবে হয়তো আরও আগেই computerized করে ফেলতে পারতাম। আমাদের কি এই সমস্যার কোন সমাধান হবেনা?

Valentine day

আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এই দিনটিতে প্রেমিক প্রেমিকা একজন আর একজনকে ভালবাসা প্রদর্শন করে। কি মজার ব্যাপার। ভালবাসাও দোকানের অন্যন্য মালের মতো প্রদর্শন করতে হয়।
অনেক মনিষী, লেখক, সাহিত্যিক ভালবাসার বিভিন্ন সংগা দিয়েছেন। দিয়েছেন স্ব স্ব উক্তি। কিন্তু কেউই আজ পর্যন্ত সর্বজন স্বিকৃত কোন সংগা দিতে পারেনি। ব্যাপারটা বিদঘুটে বা জটিল বলে হয়ত তারা দিতে পারেনি বা দেয়নি।
তবে আমার কাছে ভালবাসা একটা সূক্ষ অনুভূতির ব্যাপার্। যে ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে আসলে পরে কিছু সুখকর অনুভূতি হয় আমরা ধরে নেই তাকে বা সেই বস্তুকে আমরা ভালবাসি। কিন্তু যখন সেই একই ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে এসে আমাদের কোন খারাপ বা বাজে অনুভূতি হয় তখন নিজের উপর ঘেন্না হয় ছি! আমি এটাকে বা কাকে ভালবাসি (ক্ষেএ বিশেষে)। একই ব্যক্তি বা বস্তুর উপর পরষ্পর বিরোধী অনুভূতি। জটিল ব্যপার। মাথা নষ্টকর। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে দেখা যাবে, যখনই কোন কাজ আমাদের পছন্দের বাইরে চলে যায় তখনই আমাদের ভালবাসা কপুরের মতো উড়ে যায়। তাইতো কোন এক কবি বলেছেন “অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।”
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখতে পাই, রোমিয়-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখা এবং আরও অন্যান্য। তাদের প্রেম অমর হয়ে আছে এবং থাকবেও। তারা প্রেমের জন্য কিনা করেছে? কেউ রাজত্ব, যশ, খ্যাতি সবই জলাঞ্জলি দিয়েছে। আর আমরা যান্ত্রিক যুগে কি নিয়ে ভালবাসার দোহাই দেই? পান থেকে চুন খসলেই জামা-কাপড়ের মত প্রেমিক বা প্রেমিকা পরিবর্তন। অথবা অযথা তর্ক।
তবে আজকাল প্রেমটা খুব সস্তা হয়ে গেছে। মোবাইলের মাধ্যমে এস,এম,এস। ইন্টারেটের মাধ্যমে ই-মেইল, ফেসবুক, চ্যাটিং কত সহজ প্রেম করাটা। হাত বাড়ালেই বন্ধু। তাই এখন আর প্রেম কাছে টানেনা, উত্তেজিত করে। প্রেম সুক্ষ থেকে সুক্ষতর অনুভূতিকে অনুভব করেনা, বাতাসে ফানুস উড়ায়। সায়ান্ন বেলায় রংয়ে রংগিন আকাশ আর প্রেমিক প্রেমিকাকে মুগ্ধ করেনা। মুগ্ধ করেনা গাংচিলের নীল আকাশে দিগন্তে উড়ে চলা, ভ্রমরের গুঞ্জন, বৃষ্টির রিমিঝিম শব্দ, হাসনাহেনার মাদকতা, চন্দ্রিমা রাতে কাশ বনের স্নিগ্ধতা, আমাবশ্যার আকাশ জুড়ে তারার মেলা, ঐ দূর দিগন্তে আকাশ আর মাটির মিশে যাওয়া। মুগ্ধ করেনা প্রিয়ার চুল, চোখ, মুগ্ধ করে ঠোঁট।
আজকাল প্রেম মানে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখা, ফাস্ট ফুডে বার্গার বা চিকেন ফ্রাই খাওয়া, মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা প্যাচাল পাড়া, বিশেষ দিনগুলোতে দামি দামি গিফট করা। তাতে নেই কোন আত্মার বন্ধন, নেই কোন আত্ম অনুভূতির প্রতিফলন। যেন টাইম পাসের একটা গেইম। আছে শুধু কিছু নষ্টামী আর ভন্ডামী। সবই যেন তপ্ত মরুভূমিতে মরিচিকা।
কোন এক মরমী গায়ক গেয়েছেন যে জন প্রেম জানে না তার সাথে নাই লেনা-দেনা, আসল সোনা ছাড়িয়া যে নেয় নকল সোনা সে জন সোনা চিনেনা। আসলেই প্রেম করতে হলে করতে হবে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে, নিজের স্বত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে। ভালবাসতে হবে নিজেকে উজাড় করে। রাম যেমন সীতার অগ্নি পরীক্ষা নিয়ে সীতাকে হারিয়েছে তেমনি ভালবাসার পরীক্ষা নিয়ে ভালবাসা হারালে চলবেনা। ভালবাসতে হবে নিজের সমস্ত বিশ্বাস দিয়ে, অনুভূতি দিয়ে, অন্তরের অন্তস্থল দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে নয়। ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য নয়, অনুভবের জন্য। ভালবাসার কোন নিদর্শন এর প্রয়োজন নেই। মা সন্তানকে ভালবাসে এর নিদর্শন বা প্রদর্শন প্রয়োজন হয়না আপনা আপনি প্রতিফলিত হয়। তেমনি সত্যিকারের ভালবাসা তোমার আমার কাজে প্রতিফলিত হবে তার জন্য কোন উৎসব বা উপলক্ষ্যের প্রয়োজন নেই। সবশেষে বলতে পারি নি:শেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নেই ওরে ক্ষয় নেই তার।
১৪/০২/২০১১